জসিমউদ্দিনের ‘নকসিকাঁথার মাঠে’র কথা সকলেরই জানা। সাজু -রুপাইয়ের প্রেমকাহিনি প্রতিটি বাঙালিরই মনে গাঁথা আছে আজও। কাঁথায় যতœ করে ফুটিয়ে তোলা তাদের দুজনের প্রেম কাহিনি ভুলতে পারেনি কেউ। তবে কাঁথা বোনা প্রায় সকলেই ভুলে গিয়েছে। পুরানো কাপড় দিয়ে তৈরি রঙিন কাঁথার কথা আর কেউ বলে না। মা-ঠাকুমারা পুরানো কাপড় দিয়ে তৈরি করতেন সুন্দর সুন্দর কাঁথা।একটি কাঁথা পেতে মাপ আনতে কমপক্ষে দু-জনের প্রয়োজন হয়। পাশের বাড়ির জ্যাঠিমা বা কাকিমার সাহায্যে পেতে নেওয়া দিনটিকে মনে রেখে শুরু হত কাঁথা বোনা। শেষ দিন এলে হিসাব করতেন কতদিন লাগলো কাঁথা বুনতে। পুরানো শাড়ির পাড় থেকে সুতো তুলে তা দিয়েই সেলাই করে ফুটিয়ে তোলা হত কাঁথা। কাঁথায় উঠে আসতো গ্রাম্যচিত্র। থাকত নানা জীবজন্তুর ছবি। ছেলের বিয়েতে নতুন কাঁথা দেবার রীতি ছিল মায়েদের কাছে।
কাঁথা সেলাই করার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল সুঁচ, সুতো । এছাড়াও লাগত অংস্থান। মোটা কাপড় কেটে সেলাই করে অংস্থান বানিয়ে নিতে হত। অংস্থান আঙুলে পরেই কাঁথা সেলাই করতেন মা-ঠাকুমারা। রান সেলাই, হেম সেলাই, কাঁথাস্টিচ প্রভৃতি ছিল সেলাইয়ের মধ্যে অন্যতম। মেশিনে তৈরি বালাপোশ আর আধুনিক কম্বলের দাপটে আজ আর কাঁথার প্রয়োজন বোধ করে না কেউ। কাঁথা বোনার মানুষ গুলিও আজ আর নেই। বর্তমান প্রজন্ম জানেই না কাঁথা বোনার পদ্ধতি। যে কারনেই আজ কাঁথা দেখা যায় না।
উল ও কাঁটার সাহায্যে সোয়েটার বা শীতের পোশাক বোনাও ছিল শিল্পের সমান। ক্রুশের সাহায্যে নানা ডিজাইনের পোশাক তৈরি হত একসময়। নামি দামি মেশিনের দাপটে সেসবের দিন ফুরিয়েছে। কেউ আর হাতে বোনা শীতের পোশাক পরতে চাই না। হারিয়েছে সে সব দিন। তবুও কোন কোন স্কুলে কর্মশিক্ষা ক্লাসের সৌজন্যে একটু বেঁচে আছে উল বোনা। তবে মায়েদের কালঘাম ছুটে যায় মেয়েদেরকে এসব শেখাতে। কারন মায়েরা তো অনেক আগেই এসবকে বিদায় জানিয়েছেন।
--- কুন্তল পাল
0 comments:
Post a Comment