টিন বা টালির চালের মাটির বাড়ি। গোবরে লেপা মসৃন বারান্দা। কোন অতিথি এলেই চালের আঁড়া থেকে একটি আসন এনে বসতে দেওয়া হত। মাটির কুঁজো থেকে একগ্লাস ঠাণ্ডা জল সঙ্গে তালপাতার পাখার ঠাণ্ডা বাতাস। এই ছিল মধ্যবিত্ত বাঙালির প্রথম আপ্যায়ন। বর্তমান সময়ে সেই আপ্যায়ন আর নেই। এসেছে দামি সোফা, ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানীয়। বাড়ির মা বোনেদের তৈরি সুন্দর সুন্দর আসন আজ আর দেখা যায় না। মাপ দিয়ে কাটা চটের বস্তার উপর উল ও সুতো দিয়ে বিভিন্ন চিত্র এঁকে ফুটিয়ে তোলার দিন শেষ হয়েছে। কখনও কখনও ছিট কাপড় কেটে ত্রিভ‚জের আকারে সেলাই করে বসিয়ে দেওয়া হত চটের উপর। পুরানো কাপড় দিয়ে পিছনের ও চারপাশের অংশ মুড়ে দিয়ে সুদৃশ্য করা হত। তালপাতা বা খেঁজুর পাতা দিয়েও বসবার আসন তৈরি হত। শীতের মরশুমে খেজুর গাছ ঝোড়ার সময় বাদ দেওয়া খেজুর পাতা সংগ্রহ করে কাখতেন বাড়ির মা বোনেরা। অবসর সময়ে সেই পাতা দিয়ে বুনতের আসন। এই সব আসন শিল্পের নিদর্শন হয়ে থাকত।
বিকালবেলা শুকনো খেঁজুর পাতা নিয়ে পাড়ায় ঘুরে ঘুরে আসন বা চাটাই বোনার আনন্দই ছিল আলাদা। পাশের বাড়ির কাকিমা কিংবা বান্ধবীর সাথে চলত আসন বোনার প্রতিযোগিতা। চটের উপর কখনও কখনও নীতি কথাও ফুটে উঠত, যা বাড়ির দেওয়ালে যতœ সহকারে ঝুলিয়ে রাখা হত। সাদা কাপড়ের উপর বাচ্চাদের জন্য ছড়া বা ¯^রবর্ণ অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ আজও গ্রামে গেলে কারও কারও বাড়িতে দেখা যায়। কার্পেট বা বাহারি সোফার ব্যবহারে সেসব আজ অতীত হয়েছে। আজ আর কেউ আসন ব্যবহার করে না। তবুও সুদৃশ্য চেয়ারে বসে আজও কারও কারও মনে পড়ে যায় আসনের কথা। দেওয়ালে ঝোলানো সুতোয় ফুটিয়ে তোলা নীতি কথাটি ধূসর মনে হয়--- ‘‘ ডালিম পাকিলে পড়ে নিজে ফেটে যায় / ছোটলোক বড় হলে বন্ধুকে কাঁদায়”
--- কুন্তল পাল
0 comments:
Post a Comment