Wednesday, June 17, 2020

নেশায় মাতছে যুবসমাজ , ডেনড্রাইটে আটকে শৈশব

         কিছুদিন ধরে বাবা লক্ষ্য করছেন ছেলে দেরিতে ঘুম থেকে উঠছে ৷ রাতে বাড়িও ফিরছে দেরি করে। খিট খিটে স্বভাব , অল্পেতে রেগে যাওয়া এসব দেখে বাবার সন্দেহ হয়। হঠাৎ ছেলের কি হল ? এক দিন ছেলের টেবিলের ড্রয়ার খুলে বাবা অবাক ! এত ওষুধের খাপ ? কিসের ওষুধ এগুলি ? দোকানে দেখাতে দোকানদার যা বললেন তা শুনে বাক্ রুদ্ধ বাবা । জানতে পারলেন এগুলি ব্যথা ও ঘুমের ওষুধ । এইসব ওষুধ খেয়ে দিনের পর দিন নেশায় মাতছে ছেলে । বর্তমান সময়ে এভাবেই অনেক যুবক যুবতী নেশায় বিভোর হচ্ছে ৷ নানারকম ট্যাবলয়েড , কাশির সিরাপ তাদের এখন নেশার সঙ্গী ৷ সবকিছুকে ছেড়ে ওরা এইসব ওষুধ কেই বেছে নিয়েছে ৷ যা তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে । ব্যথার ওষুধ , ঘুমের ওষুধ , কাশির সিরাপ সহজেই মিলছে । কোন ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়ায় এক শ্রেণীর আসাধু ব্যবসায়ীরা দেদার বিকোচ্ছে এই সব ওষুধ ৷ পঙ্গু করে তুলছে যুব সমাজকে ৷
          নিজেদের সুবিধার্থে নেশাখোর যুবক যুবতীরা নামকরণ করেছে ওষুধের | দোকানে গিয়ে নিজেদের দেওয়া নাম বললেই মিলছে 'নেশার' ওষুধ ৷ 'পটল', 'নীল আকাশ' , 'ডাল' , 'সলটু' , 'রড ' প্রভৃতি নামে নেশাখোরদের কাছে পরিচিত এইসব ওষুধ ৷ নেশায় মেতে সহজেই অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে এরা |
          সমাজে ব্যাঙের ছাতার মত একের পর এক পানশালা গজিয়ে উঠেছে । সেসব পানশালায় গভীর রাত পর্যন্ত মদ্যপান করে চলেছে যুবক-যুবতীরা । ছাত্র-ছাত্রীরাও ভিড় করছে এসব পানশালায় । বয়সের কোন নিয়ম মানছে না পানশালা কর্তৃপক্ষ । পানশালাগুলির ভিতরে নানা অসামাজিক কাজ চলছে । স্কুলছুট কিশোররাও নেশায় আসক্ত হচ্ছে । মূলত পেটের টানে যারা এক দিন পড়াশুনাকে বিদায় জানিয়েছিল তারা আজ নেশায় আসক্ত | সকাল হলেই এরা বেড়িয়ে পড়ে রুটি রুজির খোঁজে । পিঠে ছেঁড়া বস্তা নিয়ে কেউ যায় কাগজ কুড়োতে কেউ বা ইঁটভাটা বা কোন দোকানে । কাজের ফাঁকেই নেশাক্ত হচেছ ওরা । ডেনড্রাইট বা মাথা ব্যথার মলম ওদের নেশার বস্তু | ডেনড্রাইটের আঠালো নেশায় আটকে যাচ্ছে ওদের শৈশব ৷ হেরোইন তো আছেই । এক টুকরো পলিথিনে আঠা নিয়ে শুরু হয় পথচলা ৷ জামার ভিতর রেখে দেওয়া পলিথিন থেকে মাঝে মধ্যে গন্ধ নিলেই নেশায় মেতে ওঠে ওরা । নেশায় বিভোর হয়ে নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে ছোট ছোট ছেলেরা | অল্প দিনের মধ্যেই অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছে ৷ কি কারনে ওরা বেছে নিচ্ছে এই জগত ? দারিদ্র্য , চুরি যাওয়া শৈশব , কুসংঘ , সামাজিক বঞ্চনা ও নেশার মোহ ওদেরকে অন্ধকার জগতে নিয়ে যাচ্ছে ৷ পরবর্তীতে এরাই হয়ে উঠছে নামকরা সুপারি কিলার । ঘুম কাড়ছে প্রশাসনের ৷ এক দিন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলের সেল হচেছ ওদের ঠিকানা |

          ...কুন্তল পাল 

0 comments:

Post a Comment