Monday, June 22, 2020

হারিয়ে যাচ্ছে কামারশালা

     
         কর্মকার | চলতি ভাষায় কামার৷ এদের কর্মস্থলই কামারশালা ৷ শক্ত লোহা পিটিয়ে দা , কোদাল , কুড়ুল প্রভৃতি তৈরি হয় কামারশালায় । অতীত দিনের সেই কামারশালা আজ আর দেখা যায় না বললেই চলে ৷ দু-একটি আজও অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে । নতুন করে এই পেশায় আজ আর কেউ আসতে চান না |
          অতীতের কামারশালা বলতে দু চালা বা একচালা ভাঙাচোরা একটি ঘর , দুচারটে যন্ত্রপাতি , একটু কয়লা ও আগুন । চারপাশে ভেসে বেড়াত কয়লা পোড়ার গন্ধ ৷ কানে আসত অদ্ভুত এক শব্দ , যা কামারদের প্রধান যন্ত্র 'হাপর ' থেকে আসত ৷ এছাড়াও থাকত 'নিন', হাতুরি  , চিমটা বা শাঁড়াশি, হাম্বুর প্রভৃতি | একপাশে ছোট্ট একটা চারিতে থাকত জল ৷ এই নিয়েই কামারদের সংসার ৷
           প্রধান যন্ত্র হাপর দেখতে অনেকটা লম্বালম্বি ভাবে চেরা প্যারাস্যুট বা চ্যাপটা বেলুনের মত ৷ ওই একই আকারের তিনটি কাঠের পাটাতনের প্রতিটির সাথে প্রতিটি চামড়া দিয়ে যুক্ত ৷ মাঝখানে ও শেষের কাঠে একটি করে চার কোণা দরজা থাকে ৷ শেষ প্রান্তে একটি সরু লোহার নল বের হয়ে উনুনের সঙ্গে যুক্ত থাকে ৷ নলটি একটি কাঠের মাধ্যমে উনুনে যুক্ত হয় , যার মাঝ বরাবর মোটা ছিদ্র থাকে I সেই ছিদ্র দিয়ে উনুনে বাতাস যায় ৷ হাপারের সাথে তিন বেড়ের শিকল লাগানো থাকে ৷ দুপাশে দুটি বাঁশের খুঁটি ও একটি আঁড়া , আঁড়ার সাথে লম্বালম্বি ভাবে একটি বাঁশের লাঠি | পিছনের দিকটি হাপরের সাথে শিকল দ্বারা যুক্ত ৷ লাঠির সামনের দিকে যুক্ত শিকল টেনে হাওয়া করা হয় । যত বেশি টানা হবে তত বেশি হাওয়া হবে | দু পাশে দুটি বাঁশের খুঁটি ও একটি আঁড়া, এটাই তিন বেড়ে ৷ হাপর তৈরিতে মূলত গরুর চামড়া ব্যবহার করা হয় । নিন অনেকটা ইংরাজি 'টি' অক্ষরের মত দেখতে শক্ত লোহার টুকরো , যেটা মাটির মধ্যে পোঁতা থাকে । এর উপর গরম লোহা রেখে পেটানো হয় । রেলের পাটি কেটে তৈরি করা হয় পাটা , পাটার উপর গরম লোহা রেখে কাটা হয় । কামারশালার একপাশে মাটির মধ্যে অর্ধেক পোঁতা অবস্থায় রাখা থাকে একটি মাটির পাত্র , যার মধ্যে জল থাকে ৷ লোহা পিটিয়ে জিনিস তৈরি হয়ে গেলে গরম জিনিসটিকে জলে ডুবিয়ে রাখা হয় I একে চারি বলে । দা , কোদাল , কুড়ুল  প্রভৃতি জিনিস তৈরিতে আলাদা আলাদা যন্ত্রের প্রয়োজন | সবকিছুই তৈরির পর উঁকো দিয়ে ঘষে ধারালো করা হয় ৷ একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কামার উনুনের কয়লার রং ও লোহা পোড়ার গন্ধে বলে দিতে পারেন লোহা পোড়া হয়েছে কিনা ।
           একসময় চাষীদের কাছে কামারশালা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল । নাঙলের ফাল পোড়াবার জন্য কামারশালায় ভিড় লেগেই থাকত I বর্তমানে মানব চালিত গরুটানা নাঙলের ব্যবহার কমেছে ৷ চাষীদের কাছেও কদর কমেছে কামারদের | নতুন লাট্টু কিনে আল পরানোর কামারদের কাছে ছুটে যেত যুবকরা । বর্তমানে লাট্টু খেলা দেখা যায় না বললেই চলে | ফলে যত দিন এগোচ্ছে তত কদর কমছে কামারদের । এক দিন হয়ত হারিয়ে যাবে এই পেশা ! হারিয়ে যাবেন কামাররা !

    .......কুন্তল পাল 

Wednesday, June 17, 2020

নেশায় মাতছে যুবসমাজ , ডেনড্রাইটে আটকে শৈশব

         কিছুদিন ধরে বাবা লক্ষ্য করছেন ছেলে দেরিতে ঘুম থেকে উঠছে ৷ রাতে বাড়িও ফিরছে দেরি করে। খিট খিটে স্বভাব , অল্পেতে রেগে যাওয়া এসব দেখে বাবার সন্দেহ হয়। হঠাৎ ছেলের কি হল ? এক দিন ছেলের টেবিলের ড্রয়ার খুলে বাবা অবাক ! এত ওষুধের খাপ ? কিসের ওষুধ এগুলি ? দোকানে দেখাতে দোকানদার যা বললেন তা শুনে বাক্ রুদ্ধ বাবা । জানতে পারলেন এগুলি ব্যথা ও ঘুমের ওষুধ । এইসব ওষুধ খেয়ে দিনের পর দিন নেশায় মাতছে ছেলে । বর্তমান সময়ে এভাবেই অনেক যুবক যুবতী নেশায় বিভোর হচ্ছে ৷ নানারকম ট্যাবলয়েড , কাশির সিরাপ তাদের এখন নেশার সঙ্গী ৷ সবকিছুকে ছেড়ে ওরা এইসব ওষুধ কেই বেছে নিয়েছে ৷ যা তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে । ব্যথার ওষুধ , ঘুমের ওষুধ , কাশির সিরাপ সহজেই মিলছে । কোন ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়ায় এক শ্রেণীর আসাধু ব্যবসায়ীরা দেদার বিকোচ্ছে এই সব ওষুধ ৷ পঙ্গু করে তুলছে যুব সমাজকে ৷
          নিজেদের সুবিধার্থে নেশাখোর যুবক যুবতীরা নামকরণ করেছে ওষুধের | দোকানে গিয়ে নিজেদের দেওয়া নাম বললেই মিলছে 'নেশার' ওষুধ ৷ 'পটল', 'নীল আকাশ' , 'ডাল' , 'সলটু' , 'রড ' প্রভৃতি নামে নেশাখোরদের কাছে পরিচিত এইসব ওষুধ ৷ নেশায় মেতে সহজেই অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে এরা |
          সমাজে ব্যাঙের ছাতার মত একের পর এক পানশালা গজিয়ে উঠেছে । সেসব পানশালায় গভীর রাত পর্যন্ত মদ্যপান করে চলেছে যুবক-যুবতীরা । ছাত্র-ছাত্রীরাও ভিড় করছে এসব পানশালায় । বয়সের কোন নিয়ম মানছে না পানশালা কর্তৃপক্ষ । পানশালাগুলির ভিতরে নানা অসামাজিক কাজ চলছে । স্কুলছুট কিশোররাও নেশায় আসক্ত হচ্ছে । মূলত পেটের টানে যারা এক দিন পড়াশুনাকে বিদায় জানিয়েছিল তারা আজ নেশায় আসক্ত | সকাল হলেই এরা বেড়িয়ে পড়ে রুটি রুজির খোঁজে । পিঠে ছেঁড়া বস্তা নিয়ে কেউ যায় কাগজ কুড়োতে কেউ বা ইঁটভাটা বা কোন দোকানে । কাজের ফাঁকেই নেশাক্ত হচেছ ওরা । ডেনড্রাইট বা মাথা ব্যথার মলম ওদের নেশার বস্তু | ডেনড্রাইটের আঠালো নেশায় আটকে যাচ্ছে ওদের শৈশব ৷ হেরোইন তো আছেই । এক টুকরো পলিথিনে আঠা নিয়ে শুরু হয় পথচলা ৷ জামার ভিতর রেখে দেওয়া পলিথিন থেকে মাঝে মধ্যে গন্ধ নিলেই নেশায় মেতে ওঠে ওরা । নেশায় বিভোর হয়ে নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে ছোট ছোট ছেলেরা | অল্প দিনের মধ্যেই অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছে ৷ কি কারনে ওরা বেছে নিচ্ছে এই জগত ? দারিদ্র্য , চুরি যাওয়া শৈশব , কুসংঘ , সামাজিক বঞ্চনা ও নেশার মোহ ওদেরকে অন্ধকার জগতে নিয়ে যাচ্ছে ৷ পরবর্তীতে এরাই হয়ে উঠছে নামকরা সুপারি কিলার । ঘুম কাড়ছে প্রশাসনের ৷ এক দিন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলের সেল হচেছ ওদের ঠিকানা |

          ...কুন্তল পাল 

গ্রহের দোষ কাটান, বিফলে মূল্য ফেরত

           ব্যাবসায় মন্দা ? শরীর ভালো যাচ্ছে না ? চাকরিতে বাধা ? ছেলে-মেয়ের পড়াশুনায় মন বসছে না ? প্রেমে ব্যর্থ ? এসবই আপনার গ্রহের দোষ ! গ্রহের দোষ কাটান ৷ ভাবছেন কোথায় যাবেন ? আপনার এলাকাতেই আছেন , ভোলেবাবা , জয়বাবা , গৃহশ্রী , লক্ষ্মীশ্রী , শ্রীগুরু , দেবীদর্শন আরও কত শ্রী ৷ একই ছাদের নীচে সব সমস্যার সমাধান । বাত-অর্শ - ভগন্দর বিনা অপারেশনে মুক্তি ! মহিলাদের গোপন জটিল রোগ ? অনিয়মিত ঋতু ? সাদা স্রাব ? স্বপ্নদোষ ? নিমেষে সমাধান । লোকাল ট্রেনের কামড়ায় বড় বড় করে লেখা সঙ্গে ঠিকানা ও ফোন নাম্বার ৷ সঙ্গে মোটা মাইনের চাকরির প্রলোভন | ঠকবেন না , কোন ডিপোজিট নেই ৷ সব সমস্যার সমাধানের হাতছাবি ... বিফলে মূল্য ফেরত ।
          এটা কোন জ্যোতিষ কার্যালয় বা কোন চিকিৎসা কেন্দ্রের বিজ্ঞাপন নয় । যে কোন লোকাল ট্রেনে উঠলেই এমন চমকপ্রদ পোস্টার চোখে পড়বে ৷ এই প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচেছন সাধারণ মানুষ ৷মোটা টাকা লুঠছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা ৷ বিজ্ঞাপনের উপর বিজ্ঞাপন যার ফলে ট্রেনের কামড়ায় থাকা বিভিন্ন নির্দশাবলী ও ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে | পণ্য বা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে বিজ্ঞাপন ৷ বিজ্ঞাপন থেকেই কোন পণ্য সম্পর্কে জানতে পারেন সাধারণ ক্রেতা | বহুজাতিক সংস্থা হিসাবে নানা পদ্ধতি বেছে নিলেও ক্ষুদ্র বা মাঝারি সংস্থাগুলি এইসব মাধ্যম বেছে নিতে সামর্থ হয় না ৷ বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসাবে তারা ট্রেন , বাস , ট্রাম বা জনবহুল কোন স্থানকে বেছে নেয় তারা ৷ অনেক সময় এইসব বিজ্ঞাপণ বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে সাধারণের কাছে ৷ পণ্য পরিষেবার থেকেও যৌনতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় এইসব বিজ্ঞাপণে ৷ যার প্রতি আকৃষ্ঠ হচ্ছে কিশোর -কিশোরারা ৷ সন্তানদের প্রশ্নে অনেক সময় অসস্তিতে পড়তে হয় বাবা মা কে ৷ বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পা দিয়ে স্বর্বসান্ত হচেছ অনেকেই i বিদেশে চাকরির বিজ্ঞাপনের টোপে পড়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে অনেক মেয়ে ৷ নিষিদ্ধ পল্লীর অন্ধকারে কাটাতে হচেছ সারা জীবন i দীর্ঘ দিন ধরে একই স্থানে বিজ্ঞাপন সাটতে ব্যবহার করা আঠায় মরিচা পড়ে নষ্ঠ হচ্ছে যানবাহন , দূষিত হচ্ছে সমাজ ৷ সচেতন হতে হবে মানুষকে । মানুষ সচেতন হলেই বন্ধ হবে নোংরামি ৷ বাঁচবে সম্পত্তি | নাহলে নোংরা বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে পঙ্গু হয়ে যাবে সমাজ ৷

–কুন্তল পাল