Wednesday, February 12, 2020

দুগগা দুগগা......... যেন নজর না লাগে


দুগগা দুগগা......... যেন নজর না লাগে

দুগগা দুগগা......... !  আরও কি যেন বিড় বিড় করে বলেই চলেছেন মা । গাড়িতে উঠে হাত নেড়ে ছেলে বলে উঠলো ,' মা আমি যাচ্ছি ।' মা বলে উঠলেন যাচ্ছি বলতে নেই , আসছি বলতে হই । সাঠ সাঠ , বালাই সাঠ । 

ছোট ছেলেটি কাকু বলে ডেকেছে কি, সাথে সাথে ঠাকুমা বলে উঠলেন - পিছন থেকে ডাকতে নেই, কি হয়েছে আমায় বল । রাস্তাই বেরোলে কোথায় কি হই তার ঠিক আছে ?
এমনই কত কুসংস্কার এ আবদ্ধ আমদের সমাজ । এই বেড়াজাল থেকে বেরোতে পারিনি আমরা । পারিনি আমিও । ভয় হয় যদি .........।
এইতো সেদিন পাশের বাড়ির মেয়েটা বলল , বৌদি সনুকে নিয়ে বাইরে যাব ? বৌদি বলল , দাঁড়াও , কপালে একটু কাজলের টিপ দিয়ে দিই । কাজলের টিপের উপর সাদা পাউডার । মাথার বা পাশেও একটু কাজলের টিপ । বাইরে যাবার সময় বাম হাতের কড়ে আঙুলের নখে কামড় কপালে ঠেকিয়ে বললেন দুগগা দুগগা.........।
স্নানের পর ভিজে গামছা রোদে মেলে দিতেই মায়ের বকুনি........
--- কতবার বলেছি ভিজে গামছা রোদে মেলতে নেই । তবুও সেই রোদেই মেলবে ।
--- কেন ? কি হয়, রোদে মেললে ?
--- কি হয় তোমার জানতে হবে না । বারন করেছি মেলবে না । কিছু মানো না বলেই তো এই অবস্থা । দিন দিন কি চেহারা হয়েছে । সন্ধ্যা হয়েছে এবার চুলটা বেঁধে নাও । সন্ধ্যা বেলা চুল ছেড়ে রাখতে নেই ।
ইস ...., দাঁড়াও । এখানে বসো । হাঁচি দেবার আর সময় পেলো না । সাবধানে যাবে । রাস্তায় অসুবিধা হলে দাঁড়িয়ে যাবে ।
--- কি হল ? আবার দাঁড়ালে কেন ?
--- সামনে একটা কালো বিড়াল চলে গেল ।
     আজ কি যে হল আমাদের , এমনিতে আজ শনিবার । দোকানে গিয়ে আগে লেবু-লঙ্কা ঝোলাবে । মোড়ের মাথায় শনি মন্দিরে ফুল দিয়ে নমস্কার করে যেও । দিন কাল ভাল না, কখন যে কি হয় কে জানে ? উঠোনের অত সুন্দর নারকেল গাছটা কিভাবে শুকিয়ে গেল । কেউ বান না মারলে এভাবে মরে তরতাজা গাছ ? সামনে ভাল একটা দিন দেখে বাড়ির ভিত পুজোটা সেরে ফেলতে হবে । মনে করে আগে একটা ভাঙ্গা কুলো, ঝাঁটা, জুতো উঁচু করে টাঙিয়ে দেবে । আমাদের তো খুব ভাল কপাল .......।
বালায় সাঠ, আর বসার জায়গা পেল না । সকাল বেলা বাড়ির চালে বসে কা.. কা.. করছে । হুঁশ.. ভাগ । কদিন ধরে মনটা খারাপ লাগছে । কি জানি , কি খারাপ খবর আসে । দুগগা.. দুগগা..। যা ...যা... যা ....। আঁচানোর আর জায়গা পেল না বিড়ালটা । ঘরের সামনেই এসে আঁচানোর  দরকার ওর ।
ছেলেটা বললে শোনে না । কতবার বলেছি পরীক্ষা দিতে যাবার আগে ডিম খেতে নেই । পরীক্ষায় গোল্লা পাবি তখন বুঝবি ।
--- শোনো আজ কিন্তু একটু মন্দিরে যাব ।
--- কেন ? আজ তো বুধবার । তুমি তো শনি-মঙ্গলবার মন্দিরে যাও ।
--- ছেলেটারও পরীক্ষা চলছে , তার উপর আজ ভোরে একটা বাজে স্বপ্ন দেখলাম । শুনেছি ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় । তাই একটু মানত করে আসবো । শনিবারেই পুজোটা দিয়ে দেবো ।
হ্যাঁ , এসব আমাদের সমাজের কিছু কুসংস্কার , নিয়ম । যা প্রাচীনকাল থেকে মেনে আসছি আমরা । বড় বট গাছের নীচে অথবা কোর্ট চত্বরে প্রায় দেখা যাই জটলা হয়ে মানুষের ভিড় । আজও সেখান দিয়ে আসার সময় দাঁড়িয়ে পড়েন অনেকেই । কাঁচের বিভিন্ন পাত্রে গাছের ছাল-বাকল কিংবা বিভিন্ন ফল নিয়ে পসরা জমান কোন বুজরুকি বাবা । যার আসল লক্ষ্যই হল মানুষকে বোকা বানিয়ে পয়সা রোজগার করা । বিভিন্ন জটিল, কঠিন রোগ থেকে মোটা বা রোগা হবার উপায় কিংবা ফর্সা হবার নানা বুজরুকি কৌশল তার নখদর্পণে । কাউকে কুনজর থেকে রক্ষা করা অথবা ভেঙ্গে যাওয়া বিয়ে বা দাম্পত্ত্য কলহ অবলীলায় সমাধান করেন এই বুজরুকি বাবা । হাটে - বাজারে হামেশাই দেখা যাই এদের । সাপের বিষের মাদুলি , অষ্টধাতুর আংটি , শিকড়-বাকল কোনো কিছুই বাদ যাই না । আংটি ও শিকড় এর ভাড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোই চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় সন্তানদের কাছে । সন্তানদের ভালো রাখতে প্রতিদিন বদল হয় জ্যোতিষীর চেম্বারের ঠিকানা । কে বেশি ভাল , কার কথা বেশি কাজে আসে , তা নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ । সন্তানদের ভাল রাখতে গিয়ে কল্পনার জগতে পা রাখেন বাবা- মায়েরা । বাস্তব থেকে দূরে সরিয়ে দেন সন্তানদের । একটাই প্রার্থনা সন্তান যেন ভাল থাকে । যেন নজর না লাগে , দুগগা .. দুগগা...।
শেষ.......

কুন্তল পাল 

0 comments:

Post a Comment